স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ সৃষ্টির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘনিষ্ট সহচর খন্দকার মোস্তাকের (দেশীয় ষড়যন্ত্রকারীদের হোতা) নেতৃত্বে সেনাবাহিনীর কতিপয় সেনাসদস্যদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহনে পরিবারের দুই সদস্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা ব্যতীত সবাইকে নৃশংসভাবে হতা করা হয়। সেদিন বঙ্গবন্ধু এবং শিশু শেখ রাসেলসহ ২০ জনকে হত্যা করা হয়েছিলো। উল্লেখিত দু’জন দেশের বাইরে থাকায় বেঁচে গিয়েছিলেন। হত্যাকাণ্ডের প্রেক্ষাপট নানান সময়ে নানাভাবে বিবৃত হয়েছে। আমি বর্ননা করে লেখার কলেবর বৃদ্ধি করছিনা। তবে মোস্তাকসহ তৎকালীন মন্ত্রীসভার ২/৩ অংশ সদস্য হত্যার পূর্বে বা পরে জড়িত ছিলেন। অনেকের বিশ্লেষনে জড়িত ছিলেন তৎকালীন সেনাপ্রধান সফিউল্লাহ, তৎকালীন, ডিজিএফআই (ডাইরেক্টর জেনারেল অব ফোর্সেস ইন্টেলিজেন্স) এবং বিমানবাহিনী প্রধান এয়ার ভাইস মার্শাল আমিনুল ইসলাম। রক্ষীবাহিনী, সমাজতান্ত্রিক অতিবিপ্লবীগন, আওয়ামীলীগ নেতাদের স্বেচ্ছাচারিতা এবং দুর্নীতি, জাসদের গনবাহিনী কর্তৃক লুটতরাজ ইত্যাদি হত্যার প্লট তৈরীতে সহায়তা করেছিলো। বিদেশী ষড়যন্ত্রকারীদের ইঙ্গিত ছাড়া চুড়ান্তভাবে হত্যাকান্ড সম্ভব ছিলোনা। যা’হোক দীর্ঘ ২১ বছর পর ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠিত হলে ১৪ নভেম্বর পার্লামেন্টে ইনডেমনিটি এ্যাক্ট বাতিল করার মধ্য দিয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের পথ প্রশস্ত হয়। বঙ্গবন্ধুকে ১৫ আগস্ট ১৯৭৫ হত্যার পর মোস্তাক প্রেসিডেন্ট হিসেবে ২৬ সেপ্টেম্বর ১৯৭৫ হত্যাকারীদের দায় মুক্তি দিয়ে ইনডেমনিটি অধ্যাদেশ জারি করেন। পরবর্তী সময়ে ১৯৭৯ সালের পার্লামেন্টে বা আইনসভায় অধ্যাদেশটি আইনে পরিনত হয়। সেই পার্লামেন্টে আওয়ামীলীগের ৩৯ জন সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলো। অর্থাৎ এই সকল অপকর্মের বৈধতা দিয়েছিলো রাজনীতিকগন এবং বিচারকগনও। ২১ বছর পর্যন্ত আওয়ামীলীগ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহন করলেও জাতির জনকের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে এমনকি একটি এফআইআর করতেও সমর্থ্য হয়নি। ১৯৯৬ সালে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামীলীগ সরকার গঠন করলে ১৪ আগস্ট লে: কর্নেল ফারক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার এবং বঙ্গবন্ধু এবং মোস্তাকের মন্ত্রিসভার সাবেক সদস্য তাহের উদ্দিন ঠাকুরের গ্রেফতার করা হয়।সিআইডি ২০ জনকে অভিযুক্ত করে ১৫ জানুয়ারী ১৯৯৭ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করে। একই বছর ১২ মার্চ বিচারকার্য শুরু হয়। এরই মধ্যে ১৯ জুন পর্যন্ত ১৯৯৭ বিচারপতিগনের বিব্রত বোধ করার কারনে মামলাটির কার্যক্রম ৮ বার স্থগিত হয়। সর্বোপরি ৮ নভেম্বর ১৯৯৮ সালে বিচারক কাজী গোলাম রসুল ১৫ জন সাবেক সেনাকর্মকর্তাকে ফাঁসির দন্ডাদেশ দেন। যথারীতি রায়ের বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপীল হয়। ১৪ ডিসেম্বর ২০০০ হাই কোর্টে বিভক্ত রায় দেয়া হয়। বিচারক জনাব এম রুহুল আমিন ১০ জনের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন। অপর দিকে বিচারপতি জনাব এবিএম খায়রল হক ১৫ জনেরই মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন। এরপরে হাইকোর্টর তৃতীয় বেন্চ ১২ জনের মৃত্যুদন্ডাদেশ বহাল রাখেন। কিন্তু অক্টোবর ২০০১ এ বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় আসলে তাদের পুরো মেয়াদে বিচারকার্য স্থগিত হয়ে যায়। ২৩ আগস্ট ২০০৭ রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কুশলী এবং বর্তমান আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগে সংক্ষিপ্ত বিবরনি বিবৃত করেন। ২৩ সেপ্টেম্বর ২০০৭ আপীল বিভাগের ৩ বিচারপতির বেন্চ ৫ আসামীকে নিয়মিত আপীল করার জন্য লীভ টু আপীল গ্রান্ট করেন। ১২ নভেম্বর ২০০৯ দীর্ঘ ২৯ দিনের শুনানি শেষে ১৯ নভেম্বর ৫ জনের করা আপীল খারিজ করে দিয়ে হাইকোর্টের মৃত্যুদন্ডাদেশসবহাল রাখেন। ২৭ জানুয়ারী ২০১০ এমনকি আসামীদের করা রিভিউ পিটিশনও খারিজ হয়ে গেলে ২৮ জানুয়ারী ২০১০ ৫ আসামীর ফাঁসির দন্ডাদেশ কার্যকর করা হয়। ১৯৯৬ সালে শুরু হয়ে স্বাভাবিক বিচার প্রক্রিয়া অনুসরন করে দীর্ঘ ১৪ বছর সময় লাগলো বিচারের রায় কার্যকর করতে। এখনও যারা পলাতক তাদের ক্ষেত্রে রায় কার্যকর করা সম্ভব হয়নি। সকলের জানা কাহিনী আবারও বলার কারন হচ্ছে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের মতো এতো নৃশংস জঘন্য হত্যাকান্ড ইতিহাসে বিরল। অথচ আওয়ামীলীগ সরকারে এসে আইনের স্বাভাবিক ধারা অনুসরন করে জাতির কপালে যে কলংকের তিলক এঁটে দেয়া হয়েছিলো সেই কলংক থেকে জাতিকে দায় মুক্তি দিয়েছিলো। জাতি আশান্বিত হয়েছিলো। দেশে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দেশে ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে টানা তৃতীয় মেয়াদে আওয়ামীলীগ সরকারে আসা এবং মাদক নিয়ন্ত্রনে জিরো টলারেন্সর নামে রাষ্ট্রীয় বাহিনীর মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকান্ডকে বৈধতা দেয়ার ভয়াবহ চিত্র দেখে জাতি হতাশগ্রস্ত। আওয়ামীলীগের সাধারন কর্মীরা আরও বেশী ব্যথায় কাতর। আওয়ামীলীগ সরকারের কর্মকান্ড এবং বঙ্গবন্ধুর আদর্শ গনতন্ত্র এবং আইনের শাসন এখন বিপরীতে অবস্থান করছে। আওয়ামীলীগের অনুসারী সকলের মতো আমিও দীর্ঘদিন পরে হলে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের জন্য আওয়ামীলীগ সরকার এবং সরকার প্রধান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে কৃতজ্ঞ। তবে আমি সন্তুষ্ট নই। কারন বিচারকার্যটি আমার মতে অসমাপ্ত। ১৫ জন সেনা কর্মকর্তা বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করেছে এবং তারা খুনী। কিন্তু যারা যার হত্যার পরিকল্পনারারী, প্লট তৈরীকারী তাদের সম্পর্কে আমরা কি জানি? এমন কি সফি উল্লাহও বিচারের আওতায় আসেনি। আইনকে নিজস্ব গতিতে চলতে না দিয়ে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করা হচ্ছে। যখন হাজার হাজার কোটি টাকা লোপাটকারী বিচারের আওতা আসেনা, শেয়ারবাজার লুটেরা সরকারে থাকে, ব্যাংক লুটেরাদের বিচার হয়না তখন একদিকে যেমন বিএনপি-জামায়াত সমর্থকরা কিছুতেই বিশ্বাস করেনা ২ কোটি টাকার দুর্নীতি করে খালেদা জিয়া জেলে রয়েছেন। আবার চিহ্নিত অপরাধীদের যখন বিচারের আওতায় আনা হয়না তখন অধিকাংশ জনগন মনে করে শুধুমাত্র রাজনৈতিক প্রতিহিংসাপরায়ণতায় খালেদা জিয়াকে জেলে রাখা হয়েছে। সাবেক প্রধান বিচারপতি এসকে সিনহা যদি সত্যি সত্যি দুর্নীতি করে থাকেন তারপরও জনগন বিশ্বাস করবেনা। কারন তাঁকে সরকারই জোর করে বিদেশ পাঠিয়ে এখন দুর্নীতির মামলা দায়ের করা হয়েছে। দুর্নীতিবাজ সাবেক বিচারপতিকে সরকার কেনো জোর করে বিদেশ পাঠালো আবার এখন তাঁর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করে তাঁকে কি আইনের আওতায় আনায়ন করা যাবে? যে বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারনে জাতির জনক হত্যার বিচারকার্য থেমে থাকলো ২১ বছর। আওয়ামীলীগ ১০০ বছরে ক্ষমতায় না আসলে ১০০ বছরেও বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার হতোনা। সেই আওয়ামীলীগ সরকার কিভাবে ক্রসফায়ার বা এনকাউন্টারকে অনুমোদন করে? দুর্নীতিবাজ আমলা, পুলিশ অফিসার, এমপি বা মন্ত্রীকে কেনো আইনের আনতে পারেনা? কারন আওয়ামীলীগের আদর্শচ্যুতি ঘটেছে। আওয়ামীলীগ ক্ষমতা বদলের স্বাভাবিক পন্থা অনুসরন না করে এখন বিভিন্ন গোস্ঠী নির্ভর হয়ে গেছে। নৈতিক বল হারিয়েছে। আমি যখন লিখছি তখন অস্ট্রেলিয়ায় ১৫ আগস্ট। এখন সকাল ০০:২৩। বঙ্গবন্ধুর অনুসারী হিসেবে আওয়ামীলীগ সরকার বঙ্গবন্ধুর আদর্শ গনতন্ত্র, আইনের শাসন, সামাজিক ন্যায়বিচার, বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ এবং অসাম্প্রদায়িক রাজনীতির চেতনায় ফিরে আসবে এবং ভুল সংশোধন করে সঠিক পথে চলবে এবং তা’হলেই শুধু ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর আত্মা শান্তি পাবে। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু।
এই সংবাদটি 38 বার পঠিত হয়েছে
আন্দোলন বনাম জামাই আদর সমাদর !
ঢাকা শহরের দূর্বিসহ যানজট নিরসনে আমার বিকল্প ভাবনা Hydrotherapy - করোনার বিরুদ্ধে হতে পারে এক কার্যকর অস্ত্র দু’হাজার চৌদ্দ’র এক খন্ড স্মৃতি তসলিমা নাসরিন আর নেই!মন্তব্য দিতে চান তাহলে Login করুন, সদস্য না হলে Registration করুন।
সম্পাদক ও প্রকাশক : এস এম আজাদ হোসেন
নির্বাহী সম্পাদক : সৈয়দা আফসানা আশা
সকালের আলো মিডিয়া ও কমিউনিকেশন্স কর্তৃক
৮/৪-এ, তোপখানা রোড, সেগুনবাগিচা, ঢাকা-১০০০ হতে প্রকাশিত
মোবাইলঃ ০১৫৫২৫৪১২৮৮ । ০১৭১৬৪৯৩০৮৯ ইমেইলঃ newssokaleralo@gmail.com
গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের তথ্য অধিদপ্তরে নিবন্ধনের জন্য আবেদিত
Developed by IT-SokalerAlo